বইআজ চিত্রার বিয়ে
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীসময় প্রকাশন
মূল্যরকমারি
প্রকাশকাল২০০১
পৃষ্ঠা সংখ্যা১০০

কাহিনী সংক্ষেপ

রহমান সাহেব ঠিক করলেন রতনকে তিনি গতরাতের ঘটনাটা বলবেন। তিনি মাছের কথা বলা শুনতে পেয়েছেন শুনে অন্যরা হয়ত পাগল ঠাওড়াবে, তবে তার অফিসের পিয়ন রতন যে নির্বিকার আচরণ করবে সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তাড়া থাকায় মাছের ঘটনা পুরোপুরি বলা হয় নি পরে। বড় মেয়ের কাছে চাইনিজ খাওয়াটা পাওনা আছে তার। চিত্রা বলেছিলো তার সাথে একদিন চাইনিজ খেতে যাবে, আজ রাতেই যাবেন ঠিক করেছেন তিনি। চটজলদি বাসায় গিয়ে তৈরি হয়ে থাকবেন যাতে দেরী না হয়। মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দুদিন বাদে, বিয়ে করে বিলেতি গোছের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর হাত ধরে নতুন জীবনে পা দেবে সে, তারপর আবার কবে এমন সুযোগ আসবে কে জানে!

হবু জামাইয়ের নামটা তার মনে নেই, ভুলে যাওয়া রোগ হয়েছে সম্প্রতি, কেউ নামটা জানিয়েছিলো কিনা সেটাও মনে করতে পারছেন না। শায়লা কিংবা ছোট মেয়ে মীরা, তারা কেউই চিত্রার বিয়ের ব্যাপারেই তাকে জানায় নি প্রথমে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ছোটবোনের মুখে শুনেছিলেন নিজের মেয়ের বিয়ের কথা। বাসায় কী কী হচ্ছে সেসবের প্রায় কিছুই তিনি জানেন না, অনেকটা জড়বস্তুর মতন পড়ে থাকেন।

মীরা নিয়মিত টেলিফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। বলাই বাহুল্য রহমান সাহেব সেটাও লক্ষ্য করেন নি। তবে শায়লা ঠিক ঠিক নজরে রেখেছেন, এর একটা বিহীত-ও করবেন শীঘ্রই। তার ধারণা ছেলেটা আর কেউ নয় তাদের ভাড়াটের চাচাতো ভাই মজনু, তাই শায়েস্তা করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

Aaj Chitrar Biye

বিয়ের আগের দিন ছোট বোন স্বামীর সাথে ঝগড়া করে রহমান সাহেবের কাছে চলে আসায় তিনি বেশ বিপদেই পড়লেন। শায়লা ফরিদাকে পছন্দ করেন না, ফরিদার হাত টানের স্বভাব আছে, তিনি তাকে বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি নন। অগত্যা বোনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন আবার বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্যে। বোনের জন্যে তার অসম্ভব মায়া কাজ করে, তবুও তিনি সেদিন ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করে উঠতে পারেন নি। বোনকে ঠেলে দিয়েছিলেন অনিশ্চয়তার দিকে আর ফরিদা আবিষ্কার করেছিলো তার গোবেচারা ভাইটি কতটা নিরুপায় আর একা!

প্রতিক্রিয়া

‘আজ চিত্রার বিয়ে’র কাহিনী নির্দিষ্ট কোনো চরিত্রকে কেন্দ্র করে না। কাহিনী সংক্ষেপে যদিও চিত্রার বাবা ওরফে চৌধুরী খলিলুর রহমানকে পুঁজি করেই সংক্ষেপিত কাহিনী বলেছি। ‘আজ চিত্রার বিয়ে’ আপাত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষের গল্প। হুমায়ূন আহমেদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপন্যাসগুলো যেমন হয়, এটাও তেমন-ই। একই ধাঁচের হলেও এটা অস্বীকার করার রাস্তা নেই, পাঠককে আবেগে জর্জরিত করার ক্ষমতা এই উপন্যাসের-ও আছে ষোলআনা। অদ্ভুত সংলাপ, অদ্ভুত চরিত্র আর মধ্যবিত্ত পরিবারের বিষণ্ণতায় মোড়া একটি উপন্যাস। সব মিলিয়ে নতুন খামে পুরোনো চিঠির মতন অবস্থা।

অদ্ভুত অথচ সরল আর রুঢ় বাস্তবতার প্রতিফলন এই উপন্যাস। গোবেচারা স্বামী, স্নেহপরায়ণ ভাই কিংবা সন্তানদের মাঝে থেকেও একা একজন বাবার উপস্থিতি যেমন আছে, তেমনি আছে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা নির্দয় এক স্বামীর উপস্থিতি। ভিন্ন চরিত্র ভিন্ন মানসিকতা ভিন্ন আর্থিক অবস্থা অথচ গল্পটা সবারই এক। সবাই কাছে থেকেও যেন ভীষণ দূরে। ভালোবাসা যেখানে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরোয় কিন্তু দূরত্ব শেষমেশ ঘোঁচাতে পারে কিনা তা আমরা জানি না। হুমায়ূন আহমেদ কখনো সেটা বলে যান নি, বলবেনও না।