বই | আকাশ বাড়িয়ে দাও |
---|---|
লেখক | মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
প্রকাশনী | জ্ঞানকোষ |
মূল্য | রকমারি |
প্রকাশকাল | ১৯৮৭ |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ৭২ |
কাহিনী সংক্ষেপ
আকাশ বাড়িয়ে দাও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি ঢাকাকে নিয়ে লেখা। যুদ্ধকালীন তিক্ততা এবং পরবর্তি সময়ের হতাশা মারাত্মকভাবে আঘাত করেছিলো অনেককে। বাবলু সেরকমই একজন। বিধ্বস্ত একটা সময় পার করে, একসময়কার স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন মদের বোতলে গুলিয়ে গিলে খাচ্ছিলো সে। আগে ছটফট করেছিলো দেশ স্বাধীন করতে আর তখন ছটফট করছিলো সেই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যে। দেশের কথা মনে পড়লেই যেন মুখের ভেতর একদলা থুথু জমে যায়। নামমাত্র সঙ্গীদের ভীড়ে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া আমিনের সাথেই তার ছিলো অন্তরঙ্গতা। আর কেউ না বুঝুক আমিন বুঝতে পারতো বাবলুকে। বন্ধুমহলের পাল্লায় পড়ে এককালের মুক্তিযোদ্ধা পা দিয়েছে অপরাধ জগতে, সেটা ভাবতেই আমিনের প্রচন্ড দুঃখ এবং ভয় কাজ করতো। এই অসমবয়সী বন্ধুত্বের গভীরতা অতুলনীয়। হিংস্রতা তো সে নিজেও কম দেখেনি, যেন এক অলৌকিক বলে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছে সে। কোনো মানে আছে এই বেঁচে ফেরার? শেষের দিকে শুরু হয় একটি প্রণয়ের গল্পের। কারণবশত কাউকে জীবনে জড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও জেসমিন এসে পড়ে তার জীবনে। কতদূর গড়ায় এই প্রণয়?
প্রতিক্রিয়া
স্যারের বই পড়ি না বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো। শৈশব-কৈশোরের মাঝামাঝি একটা সময়ে ওনার লেখা প্রায় ১৫০টা বই পড়েছিলাম, একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর অন্য লেখকদের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় ওনার বই আর পড়া হয় নি। কিশোর উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন বাদে অন্য যে বইগুলো তিনি লিখেছেন সেসবের প্রায় কিছুই আমি পড়ি নি। আকাশ বাড়িয়ে দাও সেরকমই একটা উপন্যাস। এতদিন পর স্যারের বই আবার যখন পড়তে শুরু করলাম, তখন স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো আকস্মিকভাবে নাড়া দিয়েছিলো। স্কুল জীবনের একটা বড় অংশ জুড়েই ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ওনার মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট লেখাগুলো বরাবরের মতই আমার প্রিয়। আকাশ বাড়িয়ে দাও এর ক্ষেত্রেও সেটার ব্যত্যয় ঘটেনি। কাহিনী মূলত মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ঢাকা কে কেন্দ্র করে, তবে ঘুরেফিরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কার চিত্রগুলোও চলে এসেছে স্বভাবতই। একজন মুক্তিযোদ্ধা একসময় অপরাধ জগতে পা দিলে তার প্রতি ঘৃণা জন্মানোটা অসম্ভব কিছু না, এখানে বরং আমার মনে তার প্রতি মায়া তৈরি হয়েছে। লেখক সেই মায়াটাই তৈরি করে রেখেছেন এখানে। কী দুঃসহ হতাশায় জর্জরিত হয়ে কেউ ঐ পথে পা বাড়ায় সেটাই ভাবিয়েছেন। স্বল্প সময়ের উপস্থিতি অথচ শক্তিশালী চরিত্রের দেখা পাওয়া যাবে এখানে। সবার মুখে ঘুরে ফিরে যে কথা শুনে এসেছি সেই কথার উদাহরণও পেয়েছি, প্রেম কখনো বলে কয়ে আসে না।
বেশিরভাগ সময় কিশোর উপন্যাস গুলোই পড়েছি বলে এই লেখাকে একদমই ভিন্নধর্মী মনে হয়েছে, যেন এক নতুন জাফর ইকবালকে আবিষ্কার করলাম। পরিণত পাঠকের জন্যে একজন পরিনত লেখকের লেখা। উনি এই ধারা বজায় রাখলে হয়তবা ভিন্ন ধরণের লেখার জন্যে বিখ্যাত হতেন। সেরকমটা হওয়াটাই যে স্বাভাবিক এই উপন্যাসের লেখার শক্তিমত্তাই সেটা বলে দেয়। ভাগ্যিস উনি সেটা করেন নি, ভাগ্যিস আমি কিংবা আমরা চমৎকার একটা শৈশব উপহার পেয়েছিলাম তার থেকে।