বইফাইট ক্লাব
লেখকচাক পালানিউক
অনুবাদনাবিল মুহতাসিম
প্রকাশনীবাতিঘর
প্রথম প্রকাশ২০১৫ (অনুবাদ)
পৃষ্ঠা২০৮
মুদ্রিত মূল্য২০০
ঘরানাথ্রিলার

কাহিনী সংক্ষেপঃ

ভিড়ের বাইরে অন্ধকারের মধ্যে থেকে চ্যাপ্টার লিডার এর কন্ঠ শোনা যায়:

“ফাইট ক্লাব এর প্রথম নিয়ম হচ্ছে ফাইট ক্লাব নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। ফাইট ক্লাব এর দ্বিতীয় নিয়ম হচ্ছে ফাইট ক্লাব নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। ফাইট ক্লাব এর তৃতীয় নিয়ম হচ্ছে একসাথে কেবলমাত্র একটা ফাইট…”

ফাইট ক্লাবের এই নিয়মগুলো শোনা যায় প্রায় ১০০ শহরে, আধডজন ভাষায়। টাইলার ডার্ডেন নামে এক সাবান প্রস্তুতকারী শহরের বারগুলোতে গিয়ে ভিন্ন ধরনের ক্লাব তৈরি করে বেড়াচ্ছে যার নাম ‘ফাইটক্লাব’। প্রজেক্ট মেহ্যাম এর মত ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের জন্য মানুষ জড়ো করা হচ্ছে এই ফাইট ক্লাবগুলো থেকেই। পেপার স্ট্রিটের ভাড়া করা বাড়িতে টাইলারের ব্রেইন ওয়াশ করা স্পেস মাঙ্কিগুলো (ফাইট ক্লাব থেকে জড়ো করা লোকগুলো) কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবী ধ্বংস করার মত ভয়ঙ্কর এক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।

Fight Club

বিকৃত মানসিকতার টাইলারকে থামাতে পারবে শুধুমাত্র একজনই। নাম না জানা একজন অটোমোবাইল রিকল স্পেশালিস্ট, যে টাইলারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। নিজের জীবন নিয়ে, কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট এই ব্যক্তি। মারাত্মক ইনসমনিয়ায় ভুক্তভুগি একজন চাকুরিজীবীর কী এমন বিশেষ ক্ষমতা আছে, যার দ্বারা সে এই পুরো পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে পারে? খুনের দায়ে অভিযুক্ত এই ব্যক্তিটি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে নির্দোষ বলছে, কেন?

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

ইতিহাসের অন্যতম চমৎকার একটা থ্রিলার। ‘ফাইট ক্লাব’ বিখ্যাত হওয়ার কারণ শুধুমাত্র এর থ্রিল বা টুইস্ট না, থ্রিলারের ভেতর লুকিয়ে থাকা জীবন সম্পর্কে চমৎকার কিছু ধারণাও বিখ্যাত হওয়ার কারণের মধ্যে পড়ে। বইয়ের শেষের দিকে পাঠক আচমকা একটা ধাক্কা খাবেন। এমন কিছু একটা জানতে পারবেন যেটা তারা আন্দাজ করেন নি।

কাহিনীর চরিত্রের বৈশিষ্ট, বিষয়বস্তু অত্যন্ত উদ্ভট। এতটাই উদ্ভট যে আমার মনে হয়েছে পাঠক সেগুলো পড়ার পর নিজে থেকেও কখনো করতে পারে। তবুও এই উদ্ভট জিনিসগুলোর অন্তরালে লুকিয়ে আছে জীবনবোধ নিয়ে অতি বাস্তব কিছু ধারণা। গাড়ি-বাড়ি, চাকরি-অর্থ কখনোই নিজের পরিচয় হতে পারে না। মানুষের পরিচয় হলো সে মানুষ। তার আত্মা, সৃজনশীলতা, বৈশিষ্ট্য-ই তার পরিচয়। হার-জিত এ প্রকৃত কৃতিত্ব নেই, টিকে থাকাটাই আসল। টিকে থাকতে হলে জীবনে কষ্ট করতেই হবে। যে কাজ আপনি ভালোবাসেন না শুধু শুধু সেই কাজে লেগে থেকে নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

অনুবাদ প্রসঙ্গে আসি। অনুবাদ ভালো না। এক বাক্যেই বলে দিলাম অনুবাদ আমার ভালো লাগে নাই। অনুবাদ কেন পড়া হয়? যে ভাষায় আমি পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি বেশি, আবেগ অনুভূতি যে ভাষার সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত সেই ভাষায় যেন মূল লেখাকে অনুধাবন করতে পারি। কিন্তু এই অনুবাদে উল্টোটা হয়েছে, বিষয়বস্তু বোঝাটা আরো কঠিন করে দিয়েছে। ইংরেজি বইটা পড়াটাই হয়তো ভালো হতো।

প্রচুর গালি আছে এই বইয়ে, পর্নোগ্রাফিক বিষয়বস্তুর কিছু নমুনাও আছে। ব্যক্তিগতভাবে বইয়ে গালিগালাজ থাকাটা পছন্দ না করলেও আমি মনে করি উপন্যাসকে আরও বাস্তবিক করতে গেলে বাস্তবিক বিষয়বস্তুই থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গালিগুলোর রূপান্তর জুতসই হয় নাই।

ফাইট ক্লাব উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছে, কিন্তু বক্তার নাম কোথাও উল্লেখ করা নাই। এমনকি চাক পালানিউক বলেছেন তিনি নিজেই জানেন না বক্তার নাম কী! একই নামে, একই প্লটে এর মুভিও আছে, ব্রাড পিট অভিনীত মুভিটিও বিখ্যাত।

আমি বইটা পড়ার জন্য উৎসাহ দিব সবাইকে। এরকম চমৎকার বই পড়া উচিত। আর সাথে এটাও বলবো উদ্ভট ব্যাপারগুলোর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতগুলো গ্রহণ করার জন্য।